Breaking News
Loading...
Sunday 10 November 2013

মঙ্গল (গ্রহ)

17:17

সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ। পৃথিবী থেকে অনেকটা লাল দেখানোর কারণে এর অপর নাম হচ্ছে লাল গ্রহ। মঙ্গল সৌর জগতের শেষ পার্থিব গ্রহ। অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত ভূ-ত্বক রয়েছে। এর অতি ক্ষীণ বায়ুমণ্ডল রয়েছে, এর ভূ-ত্বকে রয়েছে চাঁদের মত অসংখ্য খাদ, আর পৃথিবীর মত আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি এবংমেরুদেশীয় বরফ। সৌর জগতের সর্ববৃহৎ পাহাড় এই গ্রহে অবস্থিত। এর নাম অলিম্পাস মন্‌স। সর্ববৃহৎ গভীর গিরিখাতটিও এই গ্রহে যার নাম ভ্যালিস মেরিনারিস। মঙ্গলের ঘূর্ণন কাল এবং ঋতু পরিবর্তনও অনেকটা পৃথিবীর মত।
১৯৬৫ সালে মেরিনার ৪ মহাকাশযান প্রথমবারের মত মঙ্গল গ্রহ অভিযানে যায়। এই অভিযানের পর থেকে অনেকেই ধারণা করে আসছিলেন যে মঙ্গলে তরল পানির অস্তিত্ব আছে। মঙ্গল থেকে পাওয়া আলো এবং আঁধারের তরঙ্গের মধ্যে পর্যাবৃত্ত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে এই ধারণা করা হয়। বিশেষত মঙ্গলের মেরু অঞ্চল থেকে এ ধরণের পরিবর্তন চোখে পড়ে, যা মহাসাগর বা জলাশয়ের প্রমাণ হিসেবে অনেকেই গ্রহণ করেছিল।

ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ


মঙ্গলের ব্যাসার্ধ্য পৃথিবীর অর্ধেক এবং ভর পৃথিবীর এক দশমাংশ। এর ঘনত্ব পৃথিবী থেকে কম এবং ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল পৃথিবীর শুষ্ক ভূমির মোট ক্ষেত্রফল থেকে সামান্য কম। মঙ্গল বুধ গ্রহ থেকে বড় হলেও বুধের ঘনত্ব মঙ্গল থেকে বেশী। এর ফলে বুধের পৃষ্ঠতলের অভিকর্ষীয় শক্তি তুলনামূলকভাবে বেশী। মঙ্গল দেখতে অনেকটা লাল রঙের কমলার মত। এর কারণ মঙ্গলের পৃষ্ঠতলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন  অক্সাইডের উপস্থিতি। এই যৌগটিকে সাধারণভাবে রাস্ট বলা হয়।

ভূ-তত্ত্ব


মঙ্গলের পৃষ্ঠ মূলত ব্যাসল্ট দ্বারা গঠিত। এর কক্ষীয় বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষন এবং প্রচুর পরিমাণ মঙ্গলীয় উল্কা নিয়ে গবেষণা করে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মঙ্গলের কিছু কিছু অংশে ব্যাসল্টের চেয়ে সিলিকা জাতীয় পদার্থ বেশী রয়েছে। এই অঞ্চলটি অনেকটা পৃথিবীর এন্ডেসাইট (এক ধরণের আগ্নেয় শীলা) জাতীয় পাথরের মত। এই পর্যবেক্ষণগুলোকে সিলিকা কাঁচের মাধ্যমেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। পৃষ্ঠের অনেকটা অংশ সূক্ষ্ণ আয়রন অক্সাইড যৌগ দ্বারা আবৃত। ধূলিকণা নামে পরিচিত এই যৌগটি অনেকটা ট্যালকম পাউডারের মত।মঙ্গলের কোন অভ্যন্তরীন চৌম্বক ক্ষেত্র নেই।

 কিন্তু কিছু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এর ভূ-ত্বকের কিছু অংশ চুম্বকায়িত হয়ে আছে। চুম্বকীয়ভাবে susceptible খনিজ পদার্থের কারণে সৃষ্ট এই চৌম্বকত্বকে প্যালিওম্যাগনেটিজ্‌ম বলা হয়। এই প্যালিওম্যাগনেটিজমের ধরণ অনেকটা পৃথিবীর মহাসাগরীয় গর্ভতলে প্রাপ্ত অলটারনেটিং ব্যান্ডের মত। এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে অধ্যয়ন এবং মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ারের সাহায্যে বিস্তর গবেষণা চালানোর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে যা ২০০৫ সালের অক্টোবরে পুনরায় পরীক্ষীত হয়। এই তত্ত্ব মতে পর্যবেক্ষণকৃত ব্যান্ডগুলো হল মঙ্গলে প্লেট শিলাসরণ ভূ-গঠনপ্রণালীর একটি নিদর্শন। এ ধরণের ভূ-গঠনপ্রণালী ৪ বিলিয়ন বছর পূর্ব পর্যন্ত মঙ্গলে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ৪ বিলয়ন বছর আগে গ্রহীয় ডায়নামো বিকল হয়ে পড়ায় চৌম্বক ক্ষেত্র অপসারিত হয়ে যায়।

গ্রহটির অভ্যন্তরীন গঠন অনুসন্ধানে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে এটি অন্তত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এর কেন্দ্রীয় অংশটির (core) ব্যাসার্ধ্য প্রায় ১,৪৮০ কিলোমিটার (৯২০ মাইল)। এই কেন্দ্রভাগ মূলত লৌহ দ্বারা গঠিত, অবশ্য লোহার সাথে ১৫ থেকে ১৭% সালফার রয়েছে বলে জানা যায়। এ হিসেবে মঙ্গলের কেন্দ্রভাগ আয়রন সালফাইড দ্বারা গঠিত যা অনেকাংশে তরল। এই পদার্থগুলোর ঘনত্ব পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত পদার্থের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কেন্দ্রের চারদিক ঘিরে সিলিকেট দ্বারা গঠিত একটি ম্যান্টল রয়েছে যা গ্রহটির অনেকগুলো শিলাসরণ এবং আগ্নেয় প্রকৃতির কাঠামো তৈরীতে মূল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে ম্যান্টলটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। মঙ্গলের ভূ-ত্বকের গড় পুরুত্ব ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল)। তবে এই পুরুত্ব সর্বোচ্চ ১২৫ কিলোমিটার (৭৮ মাইল) পর্যন্ত হতে দেখা যায়। অন্যদিকে পৃথিবীর ভূ-ত্বকের পুরুত্ব গড়ে ৪০ কিমি (২৫ মাইল)। পৃথিবী এবং মঙ্গল এই গ্রহ দুটির আকৃতির অনুপাত বিবেচনায় আনলে পৃথিবীর ভূ-ত্বক মঙ্গলের ভূ-ত্বক থেকে মাত্র তিনগুণ পুরু।

1 comments:

Blogger templates

 
Toggle Footer