Breaking News
Loading...
Saturday 9 November 2013

পাম জুমেইরাহ- সাগরের বুকে পাম ট্রি (বিস্ময়কর স্থাপনা-১)

23:23

দুবাই, পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এক জায়গা। অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এক পর্যটন স্পট। এই দুবাইয়ের আকর্ষণীয়স্থানগুলোর মধ্যে একটি হল তাল গাছ সদৃশ কৃত্তিম দ্বীপ, পাম জুমেইরাহ। বিস্ময়কর এই স্থাপনার কথাই আমরা আজ জানব।আরব আমিরাত আরব সাগরের উপকুলে অবস্থিত তেল সমৃদ্ধ একটি দেশ। সোনার জন্যও বিখ্যাত এটি। আরব আমিরাতের অর্থনীতিতেলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৬০ এর মধ্যে ফুরিয়ে যাবে তেলের ভাণ্ডার। তাই বাদশাহ শেখ মুহাম্মদ বিন আল মাখতুম অর্থনীতি তিকিয়ে রাখতে নযর দিলেন পর্যটন খাতে। দুবাই আরব আমিরাতের প্রধান পর্যটন শহর। দুবাইতে রয়েছে অসাধারন বীচ, বিলাসবহুল হোটেল, অত্যাধুনিক শপিং মল সহআকর্ষণীয় সব পর্যটন স্পট। প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন পর্যটক দুবাইয়ের বীচে বেরাতে আসে। এই সংখ্যাকে বারিয়ে ৩ গুন অর্থাৎ ১৫ মিলিয়ন পর্যটককে আকর্ষণ করতে চায় দুবাই। কিন্তু দুবাইয়ের বীচের দৈর্ঘ্য ৭২ কিমি.। যা এই বাড়তি লোকের জন্য যথেষ্ট নয়। সমাধান একটিই, বীচের দৈর্ঘ্য বাড়ানো। কিন্তু কিভাবে? এই প্রস্নের সমাধান করলেন বাদশাহ কৃত্বিম দ্বীপের পরিকল্পনার মাধ্যমে। এই দ্বীপের ডিজাইন বের করার দায়িত্ব দেয়া হল নিখিল গ্রুপের চেয়ারম্যান সুলতান আহমদ বিন সুলেইম কে। সুলতান আহমদ বিন সুলেইম একটি কাগজে একটি বৃত্ত একে হিসেব করে দেখলেন বীচের দৈর্ঘ্য ৭ কিমি. বেরেগেছে। তিনি আনন্দে উদ্বেলিত হলেন। কিন্তু বাদশাহর জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না। তাই তিনি নিজেই কাগজ-কলম নিয়ে বসে পরলেন ডিজাইন করতে। বিভিন্ন আকার-আকৃতি নিয়ে চিন্তা করতে করতে অবশেষে তাল গাছের ডিজাইন তার মাথায় আসলো। হিসেব করে দেখা গেল এর ফলে বীচের দৈর্ঘ্য ৫৬ কিমি. বেরে গেল। অবশেষে এই ডিজাইনে তৈরি হল পাম জুমেইরাহ।


পাম জুমেইরাহ ৫.৫ বর্গ কিমি. জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এর চারিদিকে ১১.৫ কিমি. এর দেয়াল এবং ২.৫ মিটার উঁচু দেয়াল আছে যা বালি ও পাথর দিয়ে তৈরি।মুল দ্বীপ খণ্ডটিও শুধু বালু দিয়ে তৈরি। মোট ৯৪ মিলিয়ন ঘন মিটার বালু ও ৫.৫ মিলিয়নপাথর ব্যবহৃত হয়েছে। দুবাই তে মরুভূমি থাকলেও মরুভূমির বালু এই স্থাপনার জন্য সঠিক উপাদান নয়। কারন মরুভুমির বালু অতি সুক্ষ যা সহজেই পানিতে ধুয়ে যাবে। সমাধান সাগরের পানির নিচের বালি যা জমাট বাধতে সক্ষম। তাই দ্বীপ গঠনে সমুদ্র তলের বালুই ব্যবহার করা হল। 
      
এধরনের একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৫ বছর। কিন্তু বাদশাহ সময় দিলেন মাত্র ৫ বছর। অগাস্ট ২০০১ শুরু হয় এর নির্মাণ। মোট ৯ টি বারজার, ১৫ টি ট্যাঙ্কবোট, ৪ টি ড্রেজার, ৩০ টি ভারি হ্যান্ড বেইস মেশিন এবং ১০ টি ভাসমান ক্রেইন। ২.৫ বছর ধরে ৪০০০০ কর্মীর রাত দিন ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রমের ফলে অস্তিত্ব পায় পাম জুমেইরাহ।


পাম জুমেইরাহ এর বাইরে ১১.৫ কিমি. ব্যাপি ২.৫ উচু দেয়াল ছিল খুব কঠিন একটি কাজ। প্রথমে ৭.৪ মিলি. পুরু বালির স্তর তৈরি করে এরপর পাথর দিয়ে তা পানির উপরে প্রায় ৩ মিটার উঁচু করা হয়েছে। মোত ৫.৫ মিলিয়ন ঘন মিটার পাথর ব্যবহৃত হয়েছে যা দিয়ে দুইটি মিশরিও পিরামিড বানান সম্ভব। প্রতিটি পাথরের ওজন ৬ টন। দেয়াল তৈরির সময় প্রতি ২৭ মিটার অন্তর অন্তর একজন ডুবুরি পরিক্ষা করেদেখতেন প্রতিটি পাথর ঠিক জায়গায় বসেছে কিনা।সামান্য ভুল ভণ্ডুল করে দিতে পারে ১২.৩ বিলিয়ন ডলারের মহাপ্রকল্প।



পাম জুমেইরাহতে মোট ৪৫০০ বাড়ি, এপার্টমেন্ট আছে এবং এতে মোট ৫০০ পরিবার থাকতে পারে। সবচেয়ে ব্য্যবহুল বাড়ির দাম ১.২ মিলিয়ন ডলার। পাম জুমেরাহ জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে সমস্ত বাড়ি বিক্রি হয়ে যায়।


২০০৮ সালে সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হয় পাম জুমেইরাহ এর নির্মাণ কাজ। প্রযুক্তির অগ্রগতির এক অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে এই পাম জুমেইরাহ।



0 comments:

Post a Comment

Blogger templates

 
Toggle Footer