Breaking News
Loading...
Friday 17 January 2014

মনরোগ ও কিছুকথা…

23:25
পাগল আমাদের সমাজে অতি পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি শ‍‍‍‌ব্দ ।সেই শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সামাজিক, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত সমস্যার সূত্র। কিন্তু একটা মানুষকে পাগল আখ্যা দিয়ে সমাজ নিস্তার পায়। সেই সাথে থাকে ঘৃণা, বঞ্চনা, অপমান। কিন্তু এই কথা সমাজ চিন্তা করে না যে এটাও দশটা রোগের মতো রোগ এবং যার পিছনে থাকে শরীর বৃত্তীয় কারণ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে কোন উন্নত ঔষধ ও বিভিন্ন থেরাপি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা হয় তন্ত্র-মন্ত্র, কবজ, তাবিজ, মাদুলি দিয়ে। তা থেকে তথা কথিত শিক্ষিত মানুষও ব্যতিক্রম নয়। অথবা কাউকে বলতে শুনি সব তো কপালের দোষ বা আগের জন্মের পাপের শাস্তি, এই সব যখন শুনি তখন মনে হয় যে শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষের গুনগত পরিবর্তন এবং সুন্দর সমাজ গঠন তা যদি না হয় তা হলে এই শিক্ষা অর্জন করে লাভ কি? আসুন পাঠকবৃন্দ আমরা সংক্ষেপে কিছূ মানসিক রোগ সম্পর্কে জেনে নেই।
 প্রথমত আমি যে রোগের কথায় সেটার নাম হল ডিপ্রেশন ।আমরা সবারই
কোন না কোন সময় মন খারাপ হয় আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি কারও দু-সপ্তাহের বেশী সময় ধরে বিষন্নতা চলতে থাকে তখন ধরতে হয় ডিপ্রেশেন রোগ হয়েছে । এই রোগের লক্ষণ সাধারণত ব্যাক্তিসত্তার উপর নির্ভর করে। যেমন সাধারণ অবস্থা থেকে চুড়ান্ত পযায়ে থাকতে পারে। জীবনের উদ্দম্যের অভাব, আত্মবিশ্বাসের অভাব, ক্ষুদা কম বা বেশী, ঘুম কম বা বেশী, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি। আর কারণ বলতে গেলে একে তিনভাগে ভাগ করা যায় ১) শরীরবৃত্তিয় ২) মনস্তাতিক কারণ ৩) সামাজিক কারণ।
* শরীরবৃত্তীয় কারণ :- আমদের মস্তিষ্কে অবস্থিত নিউরোট্রান্সমিটার রাসায়নিক খবর আদন-প্রদান করে থাকে। তার মধ্যে যদি Noradrenaline ও Serotonin রাসায়নিকের স্তর নিউরোট্রান্সমিটারের মধ্যে কমে যায় তা হলে ডিপ্রেশন দেখা দেয়। তাছাড়া আছে জিনগত কারণ মা-বাবার ডিপ্রেশন থাকলে সন্তানের মধ্যে ডিপ্রেশন হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া হরমোনের অস্বাভাবিকতা ও একটি বড় কারণ এই রোগের।
* মনস্তাতিক কারণ :- এই ক্ষেত্রে ব্যক্তির উপর নির্ভর করে যেমন যারা অতিরিক্ত উচ্ছাবিলাসী, বদ্ধধারণায় জর্জরিত এই ধরণের লোকদের সাধারণত ডিপ্রেশনের কবলে পড়ে।
* সামজিক কারণ :- সাধারণত নানা আঘাত যেমন প্রিয়জনের মৃত্যু, পরীক্ষায় অসফলতা, বিবাহ বিচ্ছেদ এবং যারা একাকিত্ব জীবন যাপন করে তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন বেশী দেখা যায়।
এই রোগের উন্নত চিকিৎসা সম্ভব কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকে এবং দু:খজনক ভাবে শেষ পরিনতি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
 এখন আমি যে রোগটা নিয়ে আলোচনা করবো তার নাম অবসেসিভ
কম্পালসিভ ডিসওর্ডার এই রোগ একধরণের উদ্দেগজনক বিশৃঙ্খলা বলা চলে। এই ধরণের রোগীর মনে বিভিন্ন অর্থহীন চিন্তা বারবার ঘুরে আসে। রোগী বুঝে যে তার চিন্তাগুলি অর্থহীন এবং সে যথা সম্ভব তা দূর করার চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পযন্ত তার চিন্তাগুলি তার মন দখল করে। অর্থাৎ কোন বদ্ধধারণার বশবর্তী হওয়াকে অবসেশন। আর ঠিক একই ভাবে কোন উদ্ভট বা অর্থহীন কাজ করাকে বলে কম্পালশন। যেমন এই ধরণের রোগীরা বারবার হাত ধোয় ,স্নান করে, কোন কাজ করলে বারবার দেখবে তা ঠিকই হয়েছে কিনা যেমন বারবার দেখবে সে দরজা লাগিয়েছে কিনা। বা টাকা গুনতে দেয়া হল বারবার দেখবে টাকা গুনা হয়েছে কিনা।এই সব রোগীরা সাধারণত খুতখুতে স্বভাবের হয় এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে।
এই রোগ ও ঔষধ এবং থেরাপীর মাধ্যমে সারানো সম্ভব কিন্ত সাধারণত সামাজিক এবং পারিবারিক সচেতনার অভাবে রোগী চিকিৎসার বাইরে থাকে। সাধারণত এইসব রোগীদের বলতে শুনি লোকটির স্বভাব খারাপ।
এই রোগের কারণ বলতে গেলে বিভিন্ন মত আছে তার মধ্যে সাধারণত শৈশবে অতিরিক্ত কড়া নিয়ম মানবার ফলে এইসব রোগ দেখা যায়। তাছাড়া আমাদের মস্তিষ্কের যেসব অংশ আমাদের চিন্তাধারা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রন করে সেইসব অঞ্চলের বিশৃংখলার ফলে এই রোগ হয়।
 অ্যাংজাইটি ডিসওর্ডার এইরোগের রোগীরা সবসময় একটা অপ্রীতিকর কিছূ ঘটার
ভয়, ফলে মানসিক চাপ এবং তার ফলে নানারকম শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় অ্যাংজাইটি অনেক মনরোগে থাকতে পারে তবে এই রোগে প্রধান লক্ষণই হল আতঙ্ক।
কারণ বলতে গেলে কিছূটা জিনেটিক আর শৈশবে কোন ভীষণ ভয়ংকর অভিজ্ঞতা শিশুদের মনে চিরস্থায়ী আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়ায়।
প্রধান লক্ষণ আতঙ্ক বা উদ্বেগ, রোগীর মনে সব সময় একটা ভাব কখন কি হয়? কিন্তু এই “কিছু” সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার অভাব। এই আতংকভাব তরুণ বয়স থেকে শুরু করে সারাজীবন চলতে থাকে।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঔষধ ও সাইকোথেরাপী বিশেষ কায্যর্করী।
 হিষ্টিরিয়া এইরোগে রোগী বিভিন্ন রোগ তার নিজের সুবিধায় সৃষ্টি করে কিন্তু অবচতেনভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে নয়।
কারণ বলতে গেলে বংশগত কারণ বড় নয় আসল হল পরিবেশ। যারা ছোটবেলায় শৈশবে অতি মাত্রায় আদর দেওয়া হয়। এবং যাদের অতি আদরের ফলে বাস্তব থেকে দূরে রাখা হয় তাদের পরবর্তী সময়ে কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হওয়ার ফলে অচেতন ভাবে হিষ্টিরিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
লক্ষণ বলতে গেলে যে কোন রোগের লক্ষণ থাকতে পারে। যেমন হঠাৎ অন্ধতা, বধিরতা, মাথাব্যাথা, মানসিক অবসাদ, ফিট, বাকরোধ।
এইরোগেও সাইকোথেরাপীর পাশাপাশি মেডিসিন ব্যবহার করতে হয়।
 সিজোফ্রেনিয়া এইরোগকে মোটামোটী উন্মাদ অবস্থা বলা চলে। এইরোগে
সাধারণত রোগীর চিন্তা শক্তি কমে আসে। রোগীর বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা জন্মায়। যেমন কেউ তাকে পাছে ছুরি মারছে। রোগী কানের কাছে বিভিন্ন ভ্রান্ত শব্দ শুনতে পায়। এই রোগের সমস্যা হল রোগী বুঝতে পারে না সে যে একজন রোগী।
এইরোগের পেছনে বংশগত এবং পারিপাশ্বিক কারণ কাজ করে।
সুচিকিৎসায় রোগী প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু মেডিসিন দির্ঘ্যদিন চালিয়ে যেতে হয়।
রোগের লক্ষণ কমে এলে সাইকোথেরাপী বিশেষ কায্যর্কর হয়।
 সাইকো সোমাটিক ডিসওর্ডার এর অর্থ দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যা ও চাপের ফলে দেহে প্রকৃতই রোগের উদ্ভব হয়। এগুলোকেই বলে সাইকো সোমাটিক ডিসওর্ডার।
চিকিৎসা মানসিক সমস্যার সঠিক মূল্যায়ন করে সমস্যাগুলির সমাধান করা। এবং লক্ষণ বোঝে সঠিক চিকিৎসা।
তাছাড়া ও আছে আরো বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি যা সঠিক চিকিৎসায় একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। আমি আজ পযন্ত কোন রোগীকে দেখিনি তুক-তাক বা সাধুবাবা -পীরবাবার মাধ্যমে ভাল হতে। যখন তুকতাকের মাধ্যমে রোগী ভাল হয় না তখন ঔ ধুর্ত বাবাদের বলতে শুনি কোন শয়তানের শক্ত থাবা রোগীর উপর পড়েছে এবং তাকে সুস্থ করা সম্ভব নয়।
সবশেষে বলব অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী না হয়ে রোগীকে সঠিক চিকিৎসা করান। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সামাজিক চেতনা, দাম্পত্য সম্পর্কের সঠিক মূল্যায়ণ, ছেলেমেয়েকে সঠিক বাতাবরনে গড়ে তোলা। যেমন অতিরিক্ত শাসন বা অতিরিক্ত স্নেহ শিশুদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। স্কুল স্তর থেকেই শারিরীক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের পাঠ্যক্রম চালু করা।
আমি আবারও বলছি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মত মানসিক চিকিৎসা ও উন্নতস্তরে পৌছেঁ গেছে। আর কোন রোগীকে পাগল আখ্যা না দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। সুস্থ মানসিক চেতনাই সুস্থ সমাজ গঠনের হাতিয়ার।

0 comments:

Post a Comment

Blogger templates

 
Toggle Footer